ঠিকাদারদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে : সংঘাত চরমে

9th November 2020 8:44 pm বর্ধমান
ঠিকাদারদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে : সংঘাত চরমে


প্রদীপ চট্টোপাধ‍্যায় ( বর্ধমান ) :  হুমকি দিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে তোলা আদায় করার পরেও তাদের বেকায়দায় ফেলার অভিযোগ উঠলো তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে । আর তা নিয়েই পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের তৃণমূল নেতা প্রেমনাথ ঘোষালের সঙ্গে ঠিকাদারদের বিরোধ চরমে উঠেছে ।উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে  হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন  জামালপুর থানায় ।পুলিশ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে ।এই ঘটনা জানাজানি হতেই  শোরগোল পড়ে গিয়েছে জামালপুরের রাজনৈতিক মহলে। মান বাঁচাতে দায় এড়িয়েছেন জামালপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব । জামালপুরের পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচড়া গ্রামে বাড়ি তৃণমূল নেতা প্রেমনাথ ঘোষালের । তাঁর স্ত্রী সোমা ঘোষাল তৃণমূল পরিচালিত জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। লিখিত  অভিযোগে প্রেমনাথ ঘোষাল পুলিশকে জানিয়েছেন ,পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের দপ্তরের নানা দুর্নীতি  নিয়ে পূর্বেও তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাঁচড়া পঞ্চায়েতের কয়েকটি কাজের বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে গত ৫ নভেম্বর তিনি তথ্য জানার আধিকার আইন মাফিক চিঠি করেন । প্রেমনাথ ঘোষালের অভিযোগ, তিনি আরটিআই করেছেন জানার পরেই ঠিকাদাররা তাকে ফোনে হুমকি দেয় । পরে  জামালপুরের ঠিকাদার জ্যোতি চন্দ ,বাপি ঘোষ ও সমীরণ ঘোষ তার বাড়িতে  চড়াও হয় ।আরটিআই করার জন্য ওই ঠিকাদাররা তাকে হুমকি দেয়। যাবার সময়ে ঠিকাদাররা  বলে যায় আরটিআই করা চিঠি প্রত্যাহার করে না নিলে তারা তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী, পুত্রকে মেরে লাশ গুম করে দেবে ।প্রেমনাথ ঘোষাল বলেন , ঠিকাদাররা এমন হুমকি দিয়ে যাওয়ায় তার স্ত্রী ও পুত্ররা আতঙ্কে রয়েছে । ঠিকাদারদের শাস্তির দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা প্রেমনাথ ঘোষাল ।  যদিও তৃণমূল নেতা প্রেমনাথ ঘোষালের আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ঠিকাদার জ্যোতি চন্দ । তিনি পুলিশের কাছে প্রেমনাথ ঘোষালের বিরুদ্ধে  পাল্টা তোলা চাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন । জ্যোতি চন্দ ও তাঁর সহযোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ ,ভয় দেখিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমনাথ ঘোষাল ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা তোলা আদায় করে আসছেন । দুর্গা পুজোর আগে তাঁদের কাছে প্রেমনাথ ঘোষাল মোটা টাকা তোলা চায় । করোনা অতিমারির মধ্যে ব্যবসা থমকে থাকায় সেই টাকা তাঁরা দিতে অস্বীকার করেন । সেই কারণে ঠিকাদারদের বেকায়দায় ফেলতে প্রেমনাথ ঘোষাল পাঁচড়া পঞ্চায়েতের করানো পূর্বের কয়েকটি প্রকল্পের কাজ নিয়ে আরটিআই করেন । জ্যোতি চন্দ বলেন,আরটিআই করার জন্য তাদের বিল পেমেন্ট পেতে দেরি হবে । তাই প্রেমনাথ ঘোষাল আরটিআই করে তাদের বেকায়দায় ফেলতে চাইছে । অপর ঠিকাদার  বাপি ঘোষ ও সমীরণ ঘোষ বলেন , আরটিআই প্রত্যাহার করে নেবার আবেদন জানাতে তাঁরা কয়েকদিন আগে প্রেমনাথ ঘোষালের বাড়িতে গিয়েছিলেন। আরটিআই প্রত্যাহার করার জন্য ওই দিনও  প্রেমনাথ ঘোষাল তাঁদের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন । ওইদিন টাকা  দিতে অস্বীকার করায় প্রেমনাথ ঘোষালের স্ত্রী তাঁদের মারতে আসে ।  ঠিকাদার জ্যোতি চন্দ সোমবারঅভিযোগে আরও   বলেন , “প্রেমনাথ ঘোষাল শুধু ঠিকাদারদের কাছ থেকেই তোলা আদায় করেন না । রেশন ডিলার ,ইট ভাটা মলিক , বালি খাদ মালিক সবার কাছ থেকে প্রেমনাথ ঘোষাল তোলা আদায় করেন । পার্টির নামে তোলা আদায় করে প্রোমনাথ ঘোষাল নিজের আখের গোছান বলে এই  ঠিকাদারদের অভিযোগ । ”ঠিকাদার জ্যোতি  চন্দ এমন অভিযোগ তোলায় তাঁকেও এক হাত নিয়েছেন প্রেমনাথ ঘোষাল । প্লাল্টা অভিযোগে প্রেমনাথ  ঘোষাল বলেন ,“ জ্যোতি চন্দ বাম আমলে সিপিএম পার্টির হয়ে নেতাগিরি করতো । বাম আমলে যারা জামালপুরের তৃণমূল করতো তাদের উপরে নির্মম অত্যাচার চালাতো জ্যোতি চন্দ ।এখন তৃণমৃলের কয়েকজনকে পটিয়ে ঠিকাদারি কাজ করে পয়সা লুঠছে । প্রেমনাথ ঘোষাল দাবি করেন, তিনি তৃণমূলের জন্ম লগ্ন থেকে তৃণমূল পার্টি করছেন । তৃণমূলের প্রতীকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়েই তাঁর স্ত্রী জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছে । প্রেমনাথ ঘোষাল মন্তব্য করেন , দলের কর্মসূচির জন্য তিনি বিভিন্ন জনের কাছে সাহায্য নেন ।লোকের কাছে টাকা নিয়ে তিনি নিজে কোনদিন আত্মসাৎ করেন নি । প্রেমনাথ ঘোষাল বক্তব্য ,দুর্নীতি ঢাকতে ঠিকাদাররা তাঁর নামে মিথ্যা অভিযোগ  খাড়া করছেন । এই মিথ্যা অপবাদ বিষয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে  জানিয়েছেন । ” জামালপুর ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি  প্রদীপ পাল বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি । দুই পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ।এই বিষয়ে  পুলিশ তদন্ত করে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে । যদি কেউ তোলা আদায় করে থাকে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেবে । দল তার পাশে থাকবে না । ” অন্যদিকে বিজেপির জামালপুর বিধানসভার আহ্বায়ক জিতেন ডকাল বলেন , ”কাটমানি ও তোলা আদায়কারীরাই তৃণমূলের সম্পদ । ঠিকাদাররা যে অভিযোগ তুলেছে তা ১০০ শতাংশ সত্য ।কাটমানি ও তোলা আদায় করেই তৃণমূল নেতারা যে বিত্তশালী বনে গিয়েছেন তা গোটা রাজ্যের মানুষই জানেন । " 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।